উত্তরবঙ্গের চা বাগানসমূহে জেসিড বা গ্রীন ফ্লাই, ডাই ব্যাক বা আগা মরা রোগের প্রাদুর্ভাব ও করণীয়
#২
বর্তমান সময়ে পঞ্চগড় অঞ্চলের আরেকটি সিরিয়াস রোগ হলো “ডাই ব্যাক বা আগা মরা রোগ”। সাধারনত: সব বয়সের চা গাছ এ রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়। তবে নার্সারী ও মাদার বুশ জাতীয় চা গাছকে আক্রমণ করলে ক্ষতির পরিমান বেশী পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। চারা বা অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক গাছকে আক্রমণ করলে অনেক সময় গাছ বাঁচানো কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায় এবং মাদারবুশকে আক্রমণ করলে কাটিং এর পরিমান কমে যায়। Colletotrichum gloesporoides নামক ছত্রাক দ্বারা এই রোগ সংঘঠিত হয়। জুলাই-অক্টোবর মাসে মাঠে এ রোগ বেশী দেখা যায়। প্রবল বায়ু প্রবাহ, বৃষ্টিপাত, শিশির, কীটপতঙ্গ ইত্যাদির মাধ্যমে এ রোগের বিস্তার লাভ করে। মাটিতে প্রয়োজনীয় পরিমান সারের অভাব, জলাবদ্ধতা, অত্যাধিক ছায়া, আর্দ্র ও স্যাঁতস্যতে আবহাওয়া এ রোগের প্রাদুর্ভাবের জন্য সহায়ক। এ রোগের আক্রমনে প্রথমে কচি ডগায় ছোট ছোট বাদামী দাগ পড়ে। আস্তে আস্তে দাগগুলো ক্রমশ বড় হতে থাকে ও হলুদাভ হয়। পরবর্তীতে এই দাগ আক্রমনের স্থান থেকে উপর ও নিচে উভয় দিকে বর্ধিত হয়ে ধুসর বাদামী বা কালো রং ধারণ করে। এ কালো দাগ ক্রমশ আক্রান্ত ডালের নিচের দিকে বৃদ্ধি পেতে থাকে। বাড়ন্ত মুকুল (Auxillary bud) প্রস্ফুটিত হতে পারে না। ফলে বাড়ন্ত মুকুল (Auxillary bud), পাতাসমূহ ও ডাল-পালা আস্তে আস্তে সজিবতা হারিয়ে শুকিয়ে যায় এবং মারা যায়। গাছের বা ডালের আগা হতে গোড়ার দিকে ক্রমশ আক্রান্ত ডাল-পালাগুলো মারা যায় বিধায় এ রোগকে ডাই ব্যাক বা আগা মরা রোগ বলা হয়।
এ রোগ প্রতিকারের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক ব্যবস্থা না নিলে রোগের প্রাদুর্ভাব দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। রোগের আক্রমণ দেখা যাওয়া মাত্রই রোগ সংঘঠিত হওয়ার অনুকূল নিয়ামকসমূহের (ফ্যাক্টরগুলো) জরুরী ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
- রোগাক্রমণ অল্প এলাকায় হলে এবং সম্ভব হলে আক্রান্ত অংশের সামান্য নিচে ধারালো চাকু দিয়ে কেটে রোগাক্রান্ত অংশটি অপসারণ পূর্বক প্রতি লিটার পানিতে ১.০ গ্রাম পরিমান কার্বেন্ডাজিম+ম্যানকোজেব জাতীয় ছত্রাকনাশক (ম্যানসার/কম্প্যানিয়ন ৭৫ ডব্লিউপি) মিশিয়ে পুরো গাছে ভালভাবে স্প্রে করতে হবে।
- আক্রান্ত এলাকা বড় হলে হেক্টর প্রতি ২.৮ কেজি হারে কুপ্রাভিট ৫০ ডব্লিউপি (কপার অক্সিক্লোরাইড) ছত্রাকনাশক অথবা ৭৫০ গ্রাম হারে নোইন ৫০ ডব্লিউপি (কার্বেন্ডাজিম) অথবা ১.০ লিটার হারে এমিস্টার টপ ৩২.৫ এসসি (এজক্সিস্ট্রবিন+ডাইফেনোকোনাজোল) অথবা ২.০ কেজি হারে এনট্রাকল ৭০ ডব্লিউপি (প্রপিনেব) ১০০০ লিটার পানিতে ভালভাবে স্প্রে করতে হবে।
- সফলভাবে এ রোগ দমনার্থে ১৫ দিন পরপর আরও ২ বার উক্ত ঔষধ স্প্রে করতে হবে।
মোহাম্মদ শামীম আল মামুনের কাছ থেকে সংগৃহীত, বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বিজ্ঞানী
